চিত্রকলা, কারুশিল্পে যুক্ত হলে মানসিক স্বাস্থ্যে উপকারী প্রভাব ফেলে।

ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।

এক সময় নারীরা ঘরে বসেই সোয়েটার বুনতেন। মনোযোগের সাথে এরকম কাজ করার জন্যই কি তাদের মন শান্ত থাকতো?

সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বলছে, মনোযোগের চাইতেও উপকারী প্রভাব ফেলে এই ধরনের সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকতে পারলে।

গবেষণার প্রধান যুক্তরাজ্যের ‘অ্যাঙ্গেলিয়া রাসকিন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স’য়ের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলেন কিজ সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “শিল্প মাধ্যম সহজলভ্য আর সুলভ। স্বল্প খরচেই বুনন বা আঁকাআঁকির কাজে নিযুক্ত হওয়া যায়। এই ধরনের আরও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে মন মেজাজের উন্নতি ঘটানো সম্ভব।”

‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন পাবলিক হেল্থ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়, আগের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের চারু ও কারু শিল্পে যুক্ত করলে অবস্থার উন্নতি ঘটে। তবে সাধারণ মানুষদের ওপর সেসব গবেষণা করা হয়নি।

তাই এবার মানসিক সমস্যায় ভুগছেন কি-না সেটা নিরীক্ষা না করেই সাধারণ মানুষদের ওপর এই গবেষণা করা হল।

উদ্দেশ্য ছিল- কীভাবে সৃজনশীল কাজ একাকিত্বের অনুভূতি কাটাতে সাহায্য করে।

যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীদের ওপর ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে মধ্যে এই বিষয়ের ওপর করা জরিপের তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। বয়স ১৬’র ওপরে প্রায় ৭ হাজার ১শ’ ৮২ জনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।

“নির্দিষ্ট শখের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণটা বিশদ আকারে শিল্প ও কারু কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ছিলাম। কারণ মানুষের শখের ভিন্নতা থাকে। আমরা শুধু দেখতে চেয়েছি এই ধরনের সৃজনশীল কাজ কীরকম প্রভাব ফেলে” বলেন কিজ।

অংশ্গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এক বছরের মধ্যে এই ধরনের শিল্পকর্মে যুক্ত হয়েছিলেন। তারা আরও জানান- জীবনে তারা সুখ, তৃপ্তি আর মূল্যবোধ অনুভব করেছেন এই ধরনের কাজে যুক্ত হয়ে।

তবে একাকিত্ব এবং দুশ্চিন্তা কমাতে শিল্পকলা প্রভাব ফেলে কি-না এই বিষয়ে আরও বিস্তারিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেন মনে করেন এই মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক।

গবেষণায় যুক্ত না থেকেও এই বিষয়ে মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ও কবি ডা. ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক সিএনএন’কে এক ইমেইল বার্তায় জানান, “যে কোনো ধরনের শিল্প মাধ্যম মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির ক্ষেত্রে উপকারী। এরমধ্যে রয়েছে আত্মমর্যাদা বাড়া, দুশ্চিন্তা কমা, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।”

জনস্বাস্থ্যের জন্য চারু ও কারু শিল্প

গবেষকরা মন্তব্য করেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে চারু ও কারু শিল্প ভূমিকা রাখতে পারে।

ডা. কিজ বলেন, “সরকারীভাবে এবং স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে প্রচার করা যেমন সহজ হবে তেমনি সামাজিকভাবে এই ধরনের কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ বাড়বে।”

আর সহজেই এই ধরনের কাজ জীবনে যুক্ত করা যায়- মন্তব্য করেন তিনি।

সৃজনশীলতার নানান উপকারিতা

সৃষ্টিশীলতা জাগানোর মাধ্যমে অর্জনের অনুভূতি জাগানো যায়।

কিজ বলেন, “দক্ষতা অর্জনের অনুভূতি সুস্থতার জন্য প্রয়োজন হয়। আর চারু ও কারু শিল্পে যুক্ত হলে দিনে দিনে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, নিজের উন্নতি লক্ষ্য করে গর্ব অনুভূ হয়।”

তবে অনেকেই হয়ত নিজেকে শিল্পী মনে না করায় এসব কাজে জড়াতে চান না।

এক্ষেত্রে নিজের ভেতরে সৃষ্টিশীলতা জাগিয়ে তুলতে ডা. ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক চার ধরনের পরামর্শ দেন।

সৃজনশীলতায় আশাবাদী হতে নিজের চিন্তাভাবনাকে পুর্ণবিন্যাস করা, ভয় না পেয়ে নতুন কাজ চেষ্টা করা, এই ধরনের কাজের সাথে যারা যুক্ত তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর ছোটবেলায় এই ধরনের কোন কাজ কারতেন সেটা আবার বড়বেলায় শুরু করা।

নিজে করতে

কম খরচে সৃজনশীলতায় যুক্ত হতে চাইলে রংয়ের কাজ বেছে নেওয়া যেতে পারে। নানান ধরনের সাদাকালো বই পাওয়া যায় যেগুলো রঙিন করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

ডা. ক্লার্ক বলেন, “অনেকেই এই বইগুলো শিশুদের জন্য বলে মনে করে। তবে এসব বড়দের মনেও প্রশান্তির ছাপ ফেলতে পারে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।”

আর সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে পারলে যে কোনো কিছু করা সম্ভব।

Source: bdnews 24.com

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.