ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত, সংকট দেখা দিতে পারে সরবরাহে

ওষুধশিল্প কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা। আজ ঢাকার তেজগাঁওয়ে ঔষধ শিল্প সমিতির কার্যালয়েছবি: দীপু মালাকার

বর্তমানে সারা দেশে ১৯টির বেশি ওষুধ কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। এর জেরে কার্যত বন্ধ রয়েছে ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রম। এ অবস্থাকে জাতীয় সংকট উল্লেখ করে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়েছেন ওষুধশিল্প মালিকেরা।

ওষুধশিল্প মালিকেরা বলছেন, বর্তমানে মজুত থাকা ওষুধ দিয়ে সরবরাহকাজ চলছে। এ অচলাবস্থা বেশি সময় থাকলে দেশে ওষুধ সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। তাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে। এ কারণে অবিলম্বে সব কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম পুরোদমে চালুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ওষুধশিল্প কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওষুধশিল্প মালিকেরা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের গুলশান লিংক রোডে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির। এরপর সংগঠনের পক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকেরা বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিতে আইনবহির্ভূতভাবে আন্দোলন ও ভাঙচুর করছেন। অনেক কারখানায় কর্মকর্তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন এবং জিম্মি করে রেখেছেন। এতে কারখানায় উৎপাদনকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তাতে একসময় দেশে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকেরা বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিতে আইনবহির্ভূতভাবে আন্দোলন ও ভাঙচুর করছেন। অনেক কারখানায় কর্মকর্তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন এবং জিম্মি করে রেখেছেন।

আব্দুল মুক্তাদির, সভাপতি, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি  

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘বর্তমানে আন্দোলনের নামে যা চলছে, তা দুর্বৃত্তায়ন। আমরা কার্যত অসহায় ও জিম্মি অবস্থায় রয়েছি। হাজার কোটি টাকার কারখানা নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থা পার করছি। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরা প্রধানত তিনটি বিষয় নজরে আনতে চাই। এক. দেশের ওষুধশিল্প খাতে গত ৫০ বছরে এ ধরনের কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়নি। তাহলে এখন হঠাৎ করে কেন অসন্তোষ হচ্ছে। দুই. কয়েক দফায় শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়া হলেও আন্দোলন কেন থামছে না। তিন. দাবি আদায়ের নামে বিভিন্ন কারখানায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে।’ এ বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

ওষুধশিল্পে হঠাৎ করে এমন ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেশের বিরুদ্ধে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলে মনে করেন আব্দুল মুক্তাদির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ওষুধশিল্প স্বনির্ভর, ক্রমবর্ধমান ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি খাত। এ শিল্পকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তে একটি অশুভ শক্তি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে আমরা মনে করি।’

শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ওষুধশিল্প মালিকেরা। তাঁরা বলেন, দাবি আদায়ের নামে মিছিল, ঘেরাও বা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আইনসিদ্ধ ও যথাযথ প্রক্রিয়া নয়।

আন্দোলনকারীরা বারবার বিভিন্ন দাবি নিয়ে আসছেন বলে জানান হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমার কারখানায় গত ২৭ আগস্ট প্রথমে যেসব দাবি নিয়ে আসে; সব মেনে নেওয়া হয়। এরপর আজ আবার নতুন দাবি নিয়ে আরেক দল এসেছে। এখন আগের চেয়েও বেশি বেতন চাচ্ছে।’

এ অবস্থায় সরকার ন্যূনতম একটি বেতন নির্ধারণ করে দিতে পারে। কেউ চাইলে এর বেশিও বেতন দিতে পারবেন। এভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করানো গেলে তা সমস্যা সমাধানের একটি পথ হতে পারে বলে মনে করেন আব্দুল মুক্তাদির।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঔষধ শিল্প সমিতির সহসভাপতি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ, মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি এস এম শফিউজজামান, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জেরিন করিম, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক (কমার্শিয়াল) আফসার উদ্দিন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এবং ইউনিমেড অ্যান্ড ইউনি হেলথের এমডি এম মোসাদ্দেক হোসেন এবং সমিতির সিইও মো. মুস্তাফিজুর রহমান।

গত মাসের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে বিক্ষোভ করছেন ওষুধশিল্পের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক। তাঁরা ২১ দফা দাবি আদায়ের জন্য এই বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের অন্যতম দাবি হলো বেতন বৃদ্ধি, চাকরি নিয়মিতকরণ ও দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস তাঁদের একটি কারখানা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

ওষুধশিল্পের একাধিক মালিক জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বাড়তি সুযোগ–সুবিধা দিয়ে থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও এবার শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পরও নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে।

উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো ।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.