বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব। অনেক সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চ্যানেলই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে।
এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে পোশাকশিল্পের বড় অবদান আছে। এই মহাদেশের দেশগুলো বিশ্ববাজারের জন্য টি-শার্ট ও ট্রাউজার উৎপাদন করে হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করেছে। এই শিল্প যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, বাংলাদেশের চেয়ে এত ভালো নজির আর হতে পারে না।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অস্থিরতার জন্য কিছু কাজ ভারতে চলে যাচ্ছে। যদিও এর পরিমাণ খুব উল্লেখযোগ্য নয় ।
১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ। এরপর পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশটির তৈরি পোশাক খাতে এখন ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ১০ শতাংশ। গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের পরেই তার অবস্থান।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অস্থিরতা চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন—এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে ওই সরকারের পতনের মাসাধিককাল পরেও অস্থিরতা থামেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বলীয়ান হয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী নতুন সরকারের কাছে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। চলতি বছর গ্যাস–সংকটের কারণে এমনিতেই শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমবে।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ভারতের কথা বলা হয়েছে। সুতা উৎপাদনে এই দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও তৈরি পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। অর্থমূল্যের দিক থেকে ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের তামিলনাড়ুর ত্রিপুর শহরভিত্তিক পোশাক উৎপাদনকারীরা ৫৪ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নতুন পোশাক উৎপাদনের কার্যাদেশ পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় এসব কাজ তাদের কাছে চলে এসেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার এক পোশাক উৎপাদনকারী গোষ্ঠী বলেছে, আগস্ট মাসে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড জারার কাছ থেকে তারা ১৫ শতাংশ বেশি কার্যাদেশ পেয়েছে।
পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রাধান্য গুরুতরভাবে খর্ব করা ভারতের পক্ষে কঠিন। বাংলাদেশের পোশাক খাত বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব ইকোনমিস্টকে বলেন, পোশাক খাতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সাময়িক। কারখানা খুলতে শুরু করেছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের বড় কিছু সুবিধা আছে। বাংলাদেশের শ্রম ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ এখনো অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পায়, ভারত যা পায় না।

সর্বোপরি বাংলাদেশের পোশাক খাতের যে পরিস্থিতি, তাতে বড় বড় কার্যাদেশ সামলানোর সক্ষমতা তার আছে। বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ‘সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী’।

Source:RMG Bangladesh.

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.