প্লাস্টিক নিয়ে সিদ্ধান্ত, অংশীজনদের সাথে আলোচনার দাবি
একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের (এসইউপি) ওপর নিষেধাজ্ঞা কোনো সমাধান নয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে যে ১৭টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের শিল্পখাত। ৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান ও এ খাতে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। নয়তো এর নেতিবাচক প্রভাবে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের অর্থনীতি।
আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা।
অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়ে বক্তারা জানান, ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যা কোনো সুফল বয়ে আনেনি এমনকি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলির (ইউএনইএ)সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত একবার ব্যবহার্য পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধে সময় চান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘গত ২৭ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে ১৭টি একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের একটি তালিকা সম্বলিত গেজেট প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। ফলে প্লাস্টিক সেক্টরের ব্যবসা বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে যার সাথে জড়িত আছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং এই খাতের সাথে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতার জীবিকা জড়িত। এই খাত থেকে সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়।’
খাতসংশ্লিষ্ট ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে এসইউপি বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। এ ব্যাপারে সামিম আহমেদ বলেন, ‘এসইউপি বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারক যেমন শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, ‘এ খাতের কোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে বসেননি নীতিনির্ধারকরা। স্টেকহোল্ডারদের বাদ দিয়ে মূলত এ আইন করা হচ্ছে। আমাদের চাওয়া সরকার আইন করুক কিন্তু স্টেকহোল্ডারদেরকে বাদ দিয়ে নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ বন্ধ করে দেয়। এ কারণে ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শত কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা বেকার হয়ে যান। যে লক্ষ্যে তা বন্ধ করা হয় গত ২২ বছরেও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘পরিবেশের উন্নয়ন আমরাও চাই। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয় পণ্য নিষিদ্ধ করার যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন তা সঠিক নয় এবং বিজ্ঞান সম্মত নয়।’ বক্তারা আরো বলেন, ‘প্লাস্টিকের পুন:চক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়, পৃথিবী সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্লাস্টিকের কিছু গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, আইন অনুযায়ী গুণগত মান নিশ্চিত রাখতে প্লাস্টিক ছাড়া আয়োডিনযুক্ত লবনের মোড়ক করা সম্ভব নয়। এছাড়াও বর্তমান সরকার ভোজ্য তেলের সঙ্গে ভিটামিন-এ যুক্ত করতে চায় যা প্লাস্টিক কন্টেইনার ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয় কারণ ইউভি লাইট সুরক্ষা না থাকলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়। ঔষধের গুনগত মান রক্ষায়ও প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
জাতিসংঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত পণ্যটি বন্ধে সময় নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনগুলোর নেতারা।
Source: বাংলাদেশ টাইমস ।