পলিথিন রাখার পক্ষে সাফাই প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের

বেআইনি পলিথিন উৎপাদন বন্ধ চান না প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা। তাঁরা পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের কোষাগারে প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হওয়ার আনুমানিক তথ্য হাজির করলেন। একই সঙ্গে বলছেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন সংশোধন করা না হলে যেমন ২২ বছরে পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করা যায়নি, তেমনি শুধু চোর-পুলিশ খেলা চলবে।  গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘একবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে প্লাস্টিক সেক্টরের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিন্তা করেন।

সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না তাও চিন্তা করেন। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে, যার সঙ্গে জড়িত আছে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান। এই খাতের সঙ্গে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা জড়িত। প্রতিবছর সরকারের কোষাগারে জমা হয় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, ‘আইন সংশোধন করে শুধু পলিথিন ব্যাগ নিষেধাজ্ঞা করে, এই আইন করা ভুল ছিল। আইন পরিবর্তন করে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ। যদি এটা করেন তাহলে ঠিক হবে। যদি না করেন, তাহলে ২২ বছরেরও যেমন (পলিথিন বন্ধ) হয়নি, তেমনি শুধু চোর-পুলিশ খেলা চলবে।’

বর্তমান সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের প্রতি তির্যক মন্তব্য করে আবু মোতালেব বলেন, ‘আজকে যিনি পরিবেশ উপদেষ্টা, তিনি বেলার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

দুঃখজনক হলো তখন থেকেই প্লাস্টিক খাতের ওপর তাঁর ভীষণ ক্ষোভ ছিল। এর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। বিভিন্ন সেমিনারে, উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়েছে। তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল উনার সঙ্গে। উনি এক লাইনে কথা বলতেন, আমরা আরেক লাইনে কথা বলতাম। আমরা এখনো বলি যদি বিকল্প ব্যবস্থা চলে আসে, অটোমেটিক শপিং ব্যাগ বন্ধ হয়ে যাবে।’

অন্যদিকে সামিম আহমেদ দেশের মধ্যে যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যবহারের দায় না নিয়ে নদী ও সমুদ্রদূষণের দায় চাপালেন ভারত, নেপাল ও চীনের ওপর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সমুদ্রদূষণের জন্য আমরা দায়ী না। ভারত, নেপাল, চীন থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, এই নদীর পানি প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসে। যা বাংলাদেশের নদ, নদী ও সমুদ্রে বর্জ্য সৃষ্টি করেছে। এ জন্য সব বর্জ্যের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা যুক্তিসংগত নয়।’

একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার পক্ষে সাফাই গেয়ে সামিম আহমেদ রিসাইকলের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রিসাইকল, রিইউজের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। এ জন্য প্লাস্টিকের পুনঃচক্রায়ণের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো ও মহাসাগরীয় প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করলে অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

সূত্রঃ দৈনিক কালের কন্ঠ ।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.