জাতিসংঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত একবার ব্যবহার্য পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধে সময় চান ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, গত ২৭ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৭টি একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের একটি তালিকা সংবলিত গেজেট প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। ফলে প্লাস্টিক সেক্টরের ব্যবসাবাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ সময় খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, আয়োডিনযুক্ত লবণ প্লাস্টিক ছাড়া মোড়কীকরণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে সামিম আহমেদ বলেন, অন্য কোনো পণ্য দিয়ে মোড়কীকরণ করা হলে তার গুণগত মান থাকবে না। এছাড়া বর্তমান সরকার ভোজ্যতেলের সঙ্গে ভিটামিন-এ যুক্ত করতে চায়, যা প্লাস্টিক কনটেইনার ছাড়া সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয় কারণ ইউভি লাইট সুরক্ষা না থাকলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়। ওষুধের গুণগত মান রক্ষায়ও প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ ব্যবসায়ী বলেন, ইউএনইএ রেজ্যুলেশনে প্লাস্টিককে বর্তমান আধুনিক মানব সভ্যতায় তার ভূমিকা এবং অবদান লিপিবদ্ধ করেছে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে। আইএনসি প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে চলমান আলোচনায়ও প্লাস্টিক বন্ধ করার কথা বলা হয়নি।

২০০২ সালের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নযোগ্য করার জন্য বিকল্প ব্যাগসমূহের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়ে সামিম আহমেদ বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তকরণ, জনগণের অংশগ্রহণ, যথেষ্ট পরিমাণে বিনের (ঝুড়ি) ব্যবস্থা করা, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণ বিকল্প ব্যাগের ব্যবস্থা-সরবরাহ নিশ্চিত না করে কোনো অভিযান পরিচালনা সফল হবে না। পরে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো এবং মহাসাগরীয় প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময় তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- ২০৩০ সাল পর্যন্ত পণ্যটি বন্ধে সময় নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যে লক্ষ্যে ২০০২ সালে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ বন্ধ করে দেয় তা গত ২২ বছরে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প ছাড়া উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয় না।

সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হলে প্লাস্টিক খাতের ৬০০০ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন। এ সময় ফাউন্ডেশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ভোরের কাগজ ।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.