পর্যটন খাতে ট্যুরিজম শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন প্রয়োজন

ট্যুরিজম বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধময় খাত । এ খাতে প্রতিবছর বাড়ছে অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে প্রতিবছর পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । ২০২২ সালে বাংলাদেশের ট্যুরিজম খাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ এক মিলিয়নেরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে।

২০২৩ সালে দেশের ট্যুরিজম খাত আরও ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে সাত লাখেরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করেছে। এই হার ধরে থাকলে, ২০২৩ সালে দুই মিলিয়নেরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করবে।

ট্যুরিজম খাতের আয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশে অবদান রাখে। দেশের ট্যুরিজম খাতের আয় ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৫০% বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করেছে। এতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। যা ২০২০ সালের তুলনায় ৬০% বেশি।

খাতটিতে অপার সম্ভাবনা থাকলেও চাকরিতে বা ক্যারিয়ার গঠনে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের কতটুকু মূল্যায়ন করা হচ্ছে?

দেশের প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) পাস করেন। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় তিন লাখ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই লাখ। প্রতিবছর সর্বোচ্চ এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাবে সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম, প্রায় ৩০ হাজারের মতো। এই বিশাল পরিমাণ সম্মান পাশ  করার পর যখন সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ্ শিক্ষার্থী চাকরির সুযোগ পান, তখনই শুরু হয় প্রতিযোগিতা এবং স্বজনপ্রীতির ব্যবহার। ফলে অবমূল্যায়িত হচ্ছে সঠিক চাকরিপ্রার্থী।

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটা ক্ষেত্রেই চাকরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়ে থাকে। সেখানেই শুরু হয় ট্যুরিজম শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা।

দেশের প্রতি বছর প্রায় ১৫০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী স্নাতক পাস করেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই।

বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি  ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অল্প সংখ্যাক চাকরির সুযোগ থাকলেও সেখানে তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা। বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন সংক্রান্ত উপকরণ কিছুটা থাকলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বললেই চলে। পর্যাপ্ত উপকরণ না থাকায় সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞানের চেয়ে তাত্ত্বিক বিষয়কেই বেশি মূল্যায়ন করছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের দৃশ্যমান নানা প্রতিবন্ধকতা মুলত এই কারণেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করলেও ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাবে শিক্ষার্থীরা চাহিদামতো চাকরি পাচ্ছে না।

প্রতিবছর প্রায় চার লক্ষ শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং এর মধ্যে বিভিন্নভাবে মূল্যায়িত করার পর ক্যাডার এবং নন ক্যাডার মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। যা খুবেই খুবই চ্যালেঞ্জিং। এছাড়া বিসিএসের ২৬টা ক্যাডারের মধ্যে শিক্ষায় যে বিশাল নিয়োগ হয় সেখানে টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের  শিক্ষার্থীদের কোনো সুযোগ নেই। ফলে অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, আমারা দেখি বাংলাদেশের  বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এরটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু একটি বিষয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে। বাকি কোনো বিষয়েই তারা আবেদন করতে পারে না। তাহলে এই এতো শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

বেসরকারি খাতে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি  ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের কিছুটা সুযোগ থাকলেও স্বজনপ্রীতির কারণে মেধাবীরা সেখানে অবমূল্যায়িত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানের উপর বেশি নজর দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা অধিক দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

এছাড়া কলেজ পর্যায়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ খুলে বিপিএসসি কর্তৃক শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে পর্যটন খাতটি সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উচিৎ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা। এতে করে দেশের সার্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।

উৎসঃ risinigbd.com

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.