দক্ষ জনবলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের সংকট চলছে। এটি কোনো মিথ নয়, বাস্তব। সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে অসংখ্য দক্ষ কর্মী। এদের একটি বড় অংশ আসছেন মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকের পদ দখল করতে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রকাশিত ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০৬ দেশের ১৫ হাজার ১২৮ বিদেশি নাগরিককে ওয়ার্ক পারমিট দেয়, যা ২০২০-২১ সালের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। এটি কোনো আশাব্যঞ্জক খবর নয়। এসব বিদেশি দক্ষ কর্মীর অধিকাংশ এসেছেন তিনটি দেশ থেকে-রাশিয়া, ভারত ও চীন। এরপর আছে শ্রীলংকা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে ও নাইজেরিয়ার নাগরিক। বৈধ-অবৈধ মিলে দেশে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। ঢাকা টাইমসের জানুয়ারি ২০২৩-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের গড় বেতন মাসে ১৫০০ ডলার বা দেড় লাখের বেশি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয় : পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশ থেকে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায় এসব বিদেশি কর্মী।
অন্যদিকে এদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ কর্মী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) গত বছর জুলাই মাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক কাজ করছেন। অর্থাৎ দেশে কর্মরত বিদেশির তুলনায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৫৬ গুণ। ২০২৩ সালে দেশে বৈধপথে দেড় কোটি প্রবাসী থেকে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার, আর দেশ থেকে মাত্র আড়াই লাখ বিদেশি কর্মী নিয়ে যাচ্ছেন ১০ বিলিয়ন ডলার। এর মূল কারণ, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকাংশ আধা দক্ষ, স্বল্প দক্ষ বা অদক্ষ। আর, দেশে কর্মরত বিদেশিদের প্রায় শতভাগই দক্ষ কর্মী এবং উচ্চ বেতনভোগী।
বিএমইটির তথ্য অনুসারে, শুধু ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ ৪৬ হাজার কর্মী বৈধপথে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে অর্ধেক কর্মীই ছিলেন অদক্ষ, ২ লাখ ৬১ হাজার অর্ধ দক্ষ এবং প্রায় ৩ লাখ ৮ হাজার দক্ষ। দক্ষ কর্মীদের মধ্যে পেশাদার কর্মী, যেমন-চিকিৎসক, নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, ফার্মাসিস্ট ইত্যাদি রয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার ১৫৮ জন। বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের বেশির ভাগ গিয়েছেন চালক, কেয়ারগিভার, গৃহকর্মী, আতিথেয়তা কর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনার, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং এবং সাধারণ বৈদ্যুতিক কর্মী হিসাবে। তবে আশাব্যঞ্জক খবর হলো, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে বিদেশে যাওয়া দক্ষ কর্মীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদেশে যাওয়া পেশাদার দক্ষ কর্মী যেমন-চিকিৎসক, নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সামনের বছরগুলোতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল এবং জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশে মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের, বিশেষ করে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ দেশীয় ব্যবস্থাপকের ঘাটতি তৈরি হলো কেন? এ সংকটের পেছনে দায় কার? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, না শিল্পপ্রতিষ্ঠান, না উভয়ের?
একটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তিন পর্যায়ের ব্যবস্থাপক থাকেন-নিম্ন বা প্রথম সারির, মধ্যম পর্যায়ের ও উচ্চপর্যায়ের। নিম্ন পর্যায়ের বা প্রথম সারির ব্যবস্থাপকরা সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা স্নাতক হয়ে থাকেন, যারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ লাভ করার পর ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের বা শ্রমিকদের কার্যাবলি প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এ সারির ব্যবস্থাপকরা মধ্য সারির ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের বাস্তব রূপদানের জন্য দায়ী থাকেন।
অন্যদিকে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মূল কাজ হলো উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ স্তরের ব্যবস্থাপকরা উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করেন, উচ্চ পর্যায়ের ব্যস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নীতি নিম্ন পর্যায়ের বা প্রথম সারির ব্যবস্থাপনার কাছে ব্যাখ্যা করেন, প্রতিষ্ঠানের কোন শাখায় কত লোকবল লাগবে তা নির্ধারণ তৈরি করেন এবং সে অনুযায়ী দক্ষ জনবল নিয়োগ করেন, অধীনস্থ নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের কাজ ও দায়িত্ব বণ্টন করেন ইত্যাদি। বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, পরিচালক, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, সহ-ব্যবস্থাপক, উৎপাদন ব্যবস্থাপক ইত্যাদি পদগুলো মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দেশে বিভিন্ন সেক্টরে এখন এ পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের সংকট চলছে। এ সংকটের কারণ বুঝতে এবং সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণে এ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের কী ধরনের দক্ষতা দরকার হয়, তা জানা জরুরি।
মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকরা একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যমণি। একটি প্রতিষ্ঠানকে সফল করতে এ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের দায় বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Indeed.com নামক একটি জনপ্রিয় জব পোর্টালের মতে, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের প্রয়োজনীয় ৯টি দক্ষতা থাকা উচিত। এগুলো হলো-যোগাযোগ করার দক্ষতা, নির্দিষ্ট সমস্যার সৃজনশীল সমাধান করার দক্ষতা, পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা, সংগঠিত করার দক্ষতা, কোনো সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনা করার দক্ষতা, অন্যের আবেগ-অনুভূতি সঙ্গে একাত্ম হওয়া, নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করার দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা।
লক্ষ করলে দেখা যাবে, উপরোল্লিখিত মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের জন্য প্রযোজ্য সবকটিই দক্ষতা সফট স্কিলের মধ্যে পড়ে। স্কিল দুই ধরনের-হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল। হার্ড স্কিল বা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতা যা মূলত নির্দিষ্ট চাকরিকে টার্গেট করে অর্জিত, যেমন-কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞান, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি; অন্যদিকে সফট স্কিল হলো ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি ও বুদ্ধিমত্তানির্ভর। সফট স্কিলের মধ্যে উপরের নয়টি ছাড়াও রয়েছে-পেশাদারত্ব, নির্ভরশীলতা, দলগত কাজ করার দক্ষতা, উদ্যোগ, সততা, বিশ্বস্ততা, গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে সফলতার জন্য হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিলের অবদান যথাক্রমে ৮৫ ভাগ এবং ১৫ ভাগ। তার মানে, চাকরি ক্ষেত্রের জন্য হার্ড স্কিলের চেয়ে সফট স্কিলের গুরুত্ব প্রায় ১৫ গুণ বেশি। এর মানে সব পর্যায়ের দক্ষ দেশীয় ব্যবস্থাপকের ঘাটতি পূরণে শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিলে হবে না, মানবীয় দক্ষতা বা সফট স্কিল কীভাবে বাড়ানো যায়, তার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, এ সফট স্কিলগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে দারুণ সহায়ক, যা একটি প্রতিষ্ঠানের সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন পর্যায়ের দেশীয় ব্যবস্থাপকদের প্রয়োজনীয় হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল অর্জনে সরকার, শিল্প ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্নভাবে কাজ করতে পারে।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একটি দেশে মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরির কাজটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় করে না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা স্নাতকরা কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপক পদে যোগদান করে না। মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক হতে বেশ কয়েক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়ে। তাই বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে যে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের সংকট চলছে, তার দায় মূলত প্রতিষ্ঠানের। তবে সংকটের পেছনে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, পরিবার, সমাজ সবারই কমবেশি দায় রয়েছে। কীভাবে?
গবেষণা বলছে, বাল্যকাল থেকেই মানুষ সফট স্কিল শেখা শুরু করে। পরিবার, সমাজ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র সব জায়গা থেকেই মানুষ সফট স্কিল অর্জন করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সফট স্কিল উন্নয়নের কাজটি সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি সুপরিকল্পিত শিক্ষাপদ্ধতি, সুন্দর সমাজব্যবস্থা, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সুন্দর কর্মপরিবেশ ইত্যাদি। অন্যদিকে, হার্ড স্কিল অর্জন সফট স্কিল অর্জনের তুলনায় সহজসাধ্য। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হার্ড স্কিল বাড়ানোর জন্য শর্ট কোর্স এবং ট্রেনিং বেশ কার্যকর। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতা বা হার্ড স্কিল অর্জন করে থাকে, যদিও তা অপ্রতুল। বেশিরভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মূলত হার্ড স্কিল উন্নয়নের দিকে নজর দিয়ে থাকে এবং বাজেটের একটি বড় অংশ এ উদ্দেশ্যে খরচ হয়। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সফট স্কিল তৈরি করার জন্য বরাদ্দ খুব কম থাকে বা অনেক ক্ষেত্রে থাকে না বললেই চলে।
দেশে সব পর্যায়ের, বিশেষ করে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি ১. বিশ্ববিদ্যালয়ে আউটকাম-বেজড এডুকেশন (ওবিই) বা শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি এবং কম্পিটেন্সি-বেজড এডুকেশন (সিবিই) বা যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা; ২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক (Industry-Academia Collaboration) জোরদার করা; ৩. শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া এবং ৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করা।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সম্প্রতি মধ্যম পর্যায়ের দেশীয় ব্যবস্থাপক তৈরির জন্য একটি রূপরেখা প্রণয়নের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির কাজ হবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের চাহিদা নিরূপণ করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া; বাজার চাহিদা অনুসারে দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা; হাইটেক পার্ক, ইকনোমিক জোন ইত্যাদিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা যাতে চাকরি পান তা নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যবস্থাপক হিসাবে যাতে কাজ করার জন্য দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা; শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জব ফেয়ার আয়োজন করা ও জব ফেয়ার বর্ষপুঞ্জিকা প্রণয়ন করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ খুব দ্রুত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশে নিত্যনতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে চাকরির বাজারে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামকে যুগোপযোগী করার জন্য তা নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের হার্ড ও সফট স্কিলের সমন্বয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়, শিল্প ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোরও তাদের কর্মীদের হার্ড স্কিলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফট স্কিল উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে দেশে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ ব্যবস্থাপকের ঘাটতি দিনে দিনে বাড়তে থাকবে এবং বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী এসে উচ্চ বেতনের পদগুলো দখল করতে থাকবে। ইনওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ব্যবধান কমতে থাকবে।
প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার : উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মো. আজিজুর রহমান : প্রফেসর, ফার্মেসি বিভাগ, রাবি
সোর্স: যুগান্তর