দক্ষতা বাড়ালে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ হবে
বিদেশে সিকিউরিটি কর্মীর বিপুল চাহিদা রয়েছে। সরকারের সহযোগিতা থাকলে মাত্র দুই থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণেই দক্ষ গার্ড বিদেশে পাঠানো সম্ভব। কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিলেনিয়াম সার্টিস সিকিউরিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মেজর আশীষ মজুমদার (অব.) এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সজীব আহমেদ
মিলেনিয়াম সার্টিস সিকিউরিটির যাত্রা কবে থেকে?
মিলেনিয়াম সার্টিস সিকিউরিটি বাংলাদেশ লিমিটেড সিঙ্গাপুরের সার্টিস সিসকো (সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনী)-এর একটি অঙ্গসংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে। মিলেনিয়াম সার্টিস সিকিউরিটি বাংলাদেশ লিমিটেড ২০১১ সালে মাত্র ৬০ জন গার্ড দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় আমাদের গার্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সার্ভিসের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে আমরা সাধারণত গার্ড সার্ভিস সরবরাহের পাশাপাশি ইভেন্ট নিরাপত্তা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, প্রটেকশন সার্ভিস, এভিয়েশন সিকিউরিটি, ক্লিনিং সার্ভিস ও বাসাবাড়ি সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিয়ে থাকি।আমরা সবচেয়ে বেশি সেবা দিচ্ছি ব্যাংকগুলোতে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ১২টি ব্যাংকে সেবা দিচ্ছি। তারপর গার্মেন্টসের কারখানাগুলোতে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
দেশে সিকিউরিটি সার্ভিসের চাহিদা কেমন? কেমন কর্মসংস্থান হয়েছে?
সিকিউরিটি সার্ভিসের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। আগামীতে চাহিদা আরো বাড়বে।বর্তমানে সারা দেশে প্রায় সাত থেকে আট লাখ মানুষ এই খাতে জড়িত।
সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
সিকিউরিটি সার্ভিসের নামে এখন অনেক ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাই সিকিউরিটি সার্ভিস নেওয়ার আগে প্রথমেই দেখতে হবে কম্পানিটি নির্ভরযোগ্য কি না। তারা যে গার্ডদের নিয়োগ দিচ্ছে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা আছে কি না।যাচাই-বাছাই ছাড়া সিকিউরিটি নেওয়ার কারণে অনেক ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
এই খাতের কর্মীদের বেতন কম, কিভাবে দেখছেন?
বেতন কমের বিষয়টি আমি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কারণ এই খাতের কর্মীরা বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছে তা দিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য। সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটা সিকিউরিটি গার্ড মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছে।সেখানে আমাদের দেশের গার্ডকে মাসে সাত হাজার টাকা দিতে চায় না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বর্তমানে দেশে একটা পরিবার নিয়ে চলতে গেলে ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। সরকারি আইন অনুযায়ী সিকিউরিটি কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ৯ হাজার ৮০০ টাকা।
অনেক ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টগুলো সেই অনুযায়ী তাদের বেতন দিতে চায় না। কিন্তু তাদের বেতনের পাশাপাশি আমাদের তাদের বাসস্থান, ঈদ বোনাস, ইউনিফর্মসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হয়। উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে ক্লায়েন্টদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।
চ্যালেঞ্জগুলো কী? সরকারের কাছে কী ধরনের সহায়তা চান?
আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ এই খাতটিকে মূল্যায়ন করা হয় না। গার্ডদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না। যার কারণে গার্ডের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন লোক পাওয়া যায় না। অবমূল্যায়নের কারণে ক্লায়েন্টরাও তাদের সেলারি খুবই কম দেয়। তার পরও বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিটি গার্ডের জন্য বছরে একটা বেসিকের সমপরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয়। এই বাড়তি টাকা ক্লায়েন্ট আমাদের দেয় না। অন্যদিকে এটি একটা সেবা খাত হওয়ার পরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। মূলত এসব বাড়তি টাকা দিতে গিয়ে এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই সেবা খাত থেকে ভ্যাট সহনশীল করে সব ধরনের ভোগান্তি দূরীকরণে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।
বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে কি?
বর্তমানে বিদেশে সিকিউরিটির চাহিদা অনেক। সরকারের সহযোগিতা থাকলে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে পারি। এতে একদিকে দেশের বেকারত্বও দূর হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনা সম্ভব হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের গার্ড, নেপালি গার্ড, আফ্রিকান গার্ড রয়েছে। এসব গার্ড প্রতি ঘণ্টায় ১২ থেকে ২০ ডলার করে আয় করছেন। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে খুব সহজেই জিটুজির (সরকার টু সরকার) মাধ্যমে গার্ড পাঠাতে পারবে। মাত্র দুই থেকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে দক্ষ সিকিউরিটি কর্মী পাঠানো সম্ভব। এই বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারে। আমরা সরকারকে এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
বেতন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না?
গার্ডদের জন্য আমরা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভর্তুকির মাধ্যমে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে অসুস্থ হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে। তাদের বেতন বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ করছি।
৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি যখন অবনতি হয় তখন আপনাদের কোনো অবদান আছে কি?
৫ আগস্টের সরকার পতনের ঘটনার পর আমাদের সিকিউরিটি সার্ভিস কম্পানিগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছিল। কারণ তখন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর কর্মীরা মাঠে ছিল না। তাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের গার্ডদের দিনে-রাতে মাঠে থেকে কাজ করতে হয়েছিল। তখন অনেক সিকিউরিটি কর্মী আহতও হয়েছিল।
নারীদের অংশগ্রহণ কেমন?
এই খাতে পুরুষের তুলনায় নারীদের চাহিদা কিছুটা কম। পুরুষের তুলনায় নারীদের বেতন কিছুটা বেশি দেওয়া হচ্ছে। নারীদের রাতে ডিউটি করানো হয় না। সরকারি নিয়মানুযায়ী নারীরা ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করতে পারেন।
নিরাপত্তা সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার কেমন করছেন?
নিরাপত্তা সেবায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে আগ্রহী হন না।
আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এই খাতকে উন্নত করতে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ সিকিউরিটি কর্মী বিদেশে পাঠানো যায় সে পথ বের করতে আমরা বিদেশি এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আগামীতে আমাদের কম্পানিকে দেশের এক নম্বর সিকিউরিটি কম্পানিতে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি।
নিউজ সোর্স : কালের কণ্ঠ