চামড়া পণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে জমা দেওয়া হয়।

চামড়াজাত পণ্যপ্রথম আলো ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত মাসের সহিংসতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বা ৩০৭ কোটি টাকার চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানির ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬০ লাখ ডলারের চামড়া পণ্য, ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা এবং ৮০ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা বা নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানির ক্ষতি। 

ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল ইসলামের বরাবর আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠিয়েছেন চামড়া পণ্য ও জুতা উৎপাদন
ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। একই সঙ্গে তিনি বিষয়টি বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া ও বাণিজ্যসচিব মো. সেলিম উদ্দিনকেও অবহিত করেছেন। 

বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর লিখেছেন, ‘এই ক্ষয়ক্ষতি কেবল আমাদের শিল্পের গভীর প্রভাব ফেলছে না, কর্মসংস্থান ও আমাদের খাতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করছে।’ এই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। 

সংগঠনের পক্ষ থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সচল রাখতে ২৪ ঘণ্টা বন্দর ও ব্যাংক খোলা রাখার পাশাপাশি প্রধান রপ্তানি গন্তব্য, বিশেষ করে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের জাহাজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত, রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনে বর্তমানে ১২০ দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত ১২০ দিন সুযোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা এবং ১৬-৩১ জুলাই পর্যন্ত আমদানি পণ্য খালাসে বন্দর ভাড়া ছাড় দেওয়ার দাবি করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এর মধ্যে সাত দিনের জন্য বন্দর ভাড়ায় ছাড় দিয়েছে সরকার। 

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে এলএফএমইএবির সহসভাপতি মো. নাসির খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি অনিশ্চিত। এসব পণ্য বন্দর ও কারখানার গুদামে পড়ে আছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্যগুলো জাহাজীকরণ হয়নি। এখন বাড়তি সময় চেয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকেরা দর–কষাকষি করছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন গত ১৫ জুলাই থেকে সহিংস আকার ধারণ করে। পরে সংঘাত আরও বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই, শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। সে সময় ইন্টারনেট না থাকায় চার দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানা চালু হয়।  

চামড়া পণ্য ও জুতা কারখানার কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কিছু ক্রয়াদেশের রপ্তানি পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যায়নি। এসব পণ্যে মূল্যছাড় কিংবা উড়োজাহাজে পাঠানোর দাবি করছে বিদেশি ক্রেতারা। আবার ক্রেতা প্রতিনিধিরা সফর বাতিল করায় অনেক কারখানার প্রস্তুত পণ্য রপ্তানিও পিছিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনিশ্চয়তার কারণে নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে অনেক বিদেশি ক্রেতা।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও শিল্প এলাকায় চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির জন্য এক যুগের বেশি সময় আগে গড়ে ওঠে ম্যাফ শুজ কারখানা। আড়াই কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি চপ্পল, কেডস, স্নিকারসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি করে। কারফিউ জারির পর কারখানা পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। সে সময় তাঁদের ২ লাখ ৮৫ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ম্যাফ শুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসনাত মোহাম্মদ আবু ওবায়দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে কঠিন সময় পার করছি। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বড় ক্ষতি হয়েছে। সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করা যায়নি। তার জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে পণ্য পাঠাতে সময় বাড়ানোর আলোচনা চলছে।’ শেষ পর্যন্ত জুতা রপ্তানিতে কমবেশি প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।

সূত্রঃদৈনিক প্রথম আলো ।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.