প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর: ই-ওয়ালেটে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুমোদন দিল মালয়েশিয়া!

মালয়েশিয়ায় থাকা লাখো বাংলাদেশির জন্য একটি সুসংবাদ এসেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে, সহজে এবং নিরাপদে দেশে টাকা পাঠানোর একটি সুবিধাজনক উপায় খুঁজছিলেন—তাদের জন্য এবার সেই সমাধান হাজির হয়েছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা এখন থেকে ঘরে বসেই একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে দেশের যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং বা করপোরেট ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন, তাও আবার সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে।

এই নতুন সুযোগের নাম রিয়া ই-ওয়ালেট। মালয়েশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়, বা জেটিকে এই রিয়া ই-ওয়ালেটকে অনুমোদন দিয়েছে যেন এটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রবাসীদের বেতন প্রদান এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের সুবিধা দিতে পারে। এখন থেকে আর আলাদাভাবে মানি ট্রান্সফার সেন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রবাসীরা কর্মস্থলে বসেই নিজের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বেতন গ্রহণ করতে পারবেন এবং পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন মাত্র কয়েক ক্লিকে।

গত ১১ জুন, মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক বেরিতা হারিয়ান-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এই তথ্য। একই দিন কুয়ালালামপুরের লে মেরিডিয়ান হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়া ই-ওয়ালেটের এই কার্যক্রমের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, রিয়া মানি ট্রান্সফার, যা ইউরোনেট ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইনকরপোরেটেড-এর একটি অংশ, তারা এই ই-ওয়ালেট সেবা পরিচালনা করবে।

এই অনুমোদনের মাধ্যমে রিয়া এখন মালয়েশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ এবং বৈধ রেমিট্যান্স ব্যবস্থা চালু করতে পারছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্যও হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মালয়েশিয়ার প্রবাসী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখনো প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। তাদের জন্য একটি সহজ ও অ্যাকসেসিবল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

রিয়া ই-ওয়ালেট শুধু টাকা পাঠানোর একটি অ্যাপ নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে সরাসরি ডিজিটালভাবে বেতন গ্রহণ করতে পারবেন। নিয়োগকর্তারা রিয়া পেরোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে কর্মীদের অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠাতে পারবেন। আর এই অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রবাসীরা চাইলে বাংলাদেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন, অথবা রিয়া প্রিপেইড কার্ড—যা মাস্টারকার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি—তার মাধ্যমে কেনাকাটাও করতে পারবেন।

রিয়া মানি ট্রান্সফারের শুধু ডিজিটাল নয়, মালয়েশিয়া জুড়ে ৭৮টি শাখা রয়েছে যেখানে সেমি-ডিজিটাল সার্ভিসও প্রদান করা হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, প্রবাসীরা চাইলে ই-ওয়ালেট ছাড়াও অফলাইন উপায়ে টাকা পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন। তবে রিয়া ই-ওয়ালেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে সরাসরি দেশের মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম যেমন বিকাশ, রকেট কিংবা নগদে টাকা পাঠানো যাবে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বৈধ এবং বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত। এর ফলে সরকারও প্রতি লেনদেন থেকে একটি নির্ধারিত হারে রাজস্ব পাবে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। অবৈধ হুন্ডির মতো ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ের বদলে রিয়া ই-ওয়ালেট প্রবাসীদের উৎসাহ দেবে একটি নিরাপদ ও বৈধ পথ বেছে নিতে। এবং এটি শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তাই নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা রাখবে।

রিয়া মানি ট্রান্সফারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি প্রবাসীরা এতদিন যেসব সমস্যার মুখে পড়তেন—বিশেষ করে নিরাপদভাবে টাকা পাঠানো নিয়ে—এই নতুন সেবাটি তাদের সেই দুশ্চিন্তা দূর করবে। এতে শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, লাভবান হবে পুরো জাতি।

তাই মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসীরা, যদি এখনো অবৈধ পন্থায় টাকা পাঠিয়ে থাকেন বা রেমিট্যান্স নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাহলে এখনই সময় রিয়া ই-ওয়ালেটের মতো আধুনিক ও বৈধ সমাধানের পথে হাঁটার। ঘরে বসেই মোবাইল ব্যবহার করে নিরাপদে টাকা পাঠান পরিবারকে, আর গড়ে তুলুন একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.