সহজেই চাকরি পান ফার্মাসিস্ট
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা ফার্মেসি বা ওষুধবিজ্ঞান। ফার্মেসি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। ওষুধের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত, ওষুধ নিয়ে গবেষণা, নতুন ওষুধ উদ্ভাবন, উৎপাদন, প্রস্তুত, বিতরণ ও বিতরণ-পরবর্তী পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে ফার্মেসি জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি প্রোগ্রামে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন রাজা আহমেদ
ফার্মেসিতে কী পড়ানো হয়
চার বছর মেয়াদি বি ফার্মা প্রোগ্রামে মেইন কোর্স হচ্ছে ‘ফার্মাকোলজি’। যেখানে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ওষুধের অ্যাকশন এবং শরীরে যাওয়ার পর ওষুধ কীভাবে কাজ করছে, সে সম্পর্কে পড়ানো হয়। ‘ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি’ বিষয়ে ওষুধ তৈরি সম্পর্কে পড়ানো হয়। ‘মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি’তে মেডিসিন আবিষ্কার সম্পর্কে পড়াশোনা করা হয়। ‘বায়োফার্মাসিউটিক্স’ বিষয়ে শরীরে ওষুধ কীভাবে কাজ করছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে, পড়ানো হয়। ‘প্যাথলজি’ বিষয়ে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়। ‘ড্রাগ অ্যান্ড ডিজিজ ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে কারও অসুখ হলে কোন ওষুধ দিয়ে ম্যানেজ করা যায়, সে সম্পর্কে পড়ানো হয়। এ ছাড়া ইমিউনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফিজিওলজি এবং অ্যানাটমিও পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফার্মেসিতে বি ফার্মা প্রোগ্রাম শেষে সার্টিফিকেট নিতে হলে শিক্ষার্থীকে ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানে এক মাসের ইন্টার্নি সম্পন্ন করতে হয়। এ ইন্টার্নিও বি ফার্ম প্রোগ্রামের সিলেবাসের অংশ।
কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ৪-৫ বছর মেয়াদি ফার্মেসি শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট বের হয়। এছাড়াও ১৭টি সরকারি ও ৪১টি বেসরকারি ইনস্টিটিউটে ফার্মেসি শিক্ষার ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ডিগ্রি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণত দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট বের হয়।
ফার্মেসি পড়ার জন্য দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে। কেউ চাইলে পিএইচডি ডিগ্রিও করতে পারবেন। অনেক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফার্মেসিতে চার বছরের ডিপ্লোমা করা যাবে। কেউ চাইলে তিন মাসে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স করতে পারবেন। তারা মূলত ওষুধ বিপণনে ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এর জন্য মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পাস হতে হবে।
যোগ্যতা
ফার্মাসিস্ট হতে চাইলে পূর্বশর্ত হচ্ছে, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদি ফার্মেসি কোর্স ডিগ্রি নিতে হবে। এরপর এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স শেষ করে চাকরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তে পারেন। তবে মাথায় রাখতে হবে, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি না নিলে ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রফেশনাল সনদপত্র পাওয়া যাবে না।
কাজের ক্ষেত্র
দেশ এবং দেশের বাইরে ইউএস-এফডিএর (টঝ-ঋউঅ) মতো বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ওষুধের চাহিদা পূরণের জন্য আকর্ষণীয় বেতনে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ফার্মেসিগুলোতে পণ্য ব্যবস্থাপনা, পণ্যের মানোন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে। সরকারি কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে উচ্চ বেতনে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশ সরকারের ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, শিক্ষকতা বা দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এম ফার্মা করে উচ্চশিক্ষা জন্য নিয়ে বিদেশে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়। ইউরোপ বা আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রাথমিক জ্ঞান ফার্মেসি কারিকুলামে থাকায় খুব সহজে অন্য যেকোনো বিভাগ থেকে এগিয়ে থাকা যায়।
আয়-রোজগার
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর মেয়াদি বি ফার্ম শেষে যেকোনো ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানিতে এক মাসের ইন্টার্নি সম্পন্ন করতে হয়। তারপর বাছাই পরীক্ষায় যোগ্যতা প্রমাণ করলেই কাক্সিক্ষত চাকরি নামক সোনার হরিণ হাতের মুঠোয়। শুরুতেই বেতন পাওয়া যায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। তারপর কাজের ওপর নির্ভর করে বেতন বাড়ে।
সোর্স: দেশ রুপান্তর