খাতটির প্রতি যথাযথ নজর দিতে হবে

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং তথা হালকা প্রকৌশল খাতকে বলা হয় মাদার অব ইন্ডাস্ট্রি। এটি বলার কারণও যৌক্তিক- হালকা প্রকৌশল খাতে ভারি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল উৎপাদন করা হয়, যার মাধ্যমে ভারি শিল্প ও এর উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখা যায়।

কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে- যাকে আমরা মাদার অব ইন্ডাস্ট্রি বলছি, তার সঙ্গে আমাদের নীতি-আচরণ, বিচার-বিবেচনা কেমন? দুর্ভাগ্যের বিষয়, মাদার অব ইন্ডাস্ট্রির যেখানে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, সেখানে তার সঙ্গে করা হচ্ছে বিমাতাসুলভ আচরণ!

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে কার্যকর নিয়ম অনুযায়ী, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করা হলে তাতে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক দিতে হয় না; কিন্তু এ ধরনের মূলধনী যন্ত্রপাতি যদি দেশে উৎপাদন করা হয় তবে তাতে মূসক দিতে হয় মোটা অঙ্কের। এমন বিমাতাসুলভ আচরণের মাধ্যমে মাদার অব ইন্ডাস্ট্রির যেমন অগ্রগতি হবে না, তেমনি শিল্পের অগ্রাধিকার নীতিও ভালো সুফল দেবে না।

এটি ছাড়াও পুঁজিস্বল্পতা এবং অনুন্নত অবকাঠামোও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শনিবার যুগান্তর কার্যালয়ে দৈনিক যুগান্তর, বিটাক ও এটুআই আয়োজিত ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ভূমিকা, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞসংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন।

এর এক বছর আগে একই ধরনের আরেক গোলটেবিল বৈঠকে হালকা প্রকৌশল খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয় তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২০২০ সালকে হালকা প্রকৌশল পণ্যবর্ষ ঘোষণা করা হয়।

করোনা মহামারীর কারণে অনেক কিছু বাধাগ্রস্ত হলেও আমরা আশা করব বছরের বাকি অংশে হালকা প্রকৌশল খাতের সমস্যাগুলো সমাধানের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বস্তুত, হালকা প্রকৌশল বলা হলেও এর আর্থিক বাজার কিন্তু যথেষ্ট ভারি। বিশ্বব্যাপী হালকা প্রকৌশল শিল্পের বাজার ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যেখানে বাংলাদেশে এটি বার্ষিক প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার। এর মধ্যে মাত্র আট থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার হালকা যন্ত্রাংশও স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন হয়, যা মোট বাজারের এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।

পর্যায়ক্রমে হালকা প্রকৌশল খাতের চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণের উদ্যোগ থাকতে হবে। কারণ, ভিন্ন একটি খাত হলেও এটি গোটা শিল্প খাতের ফুয়েল তথা চালিকাশক্তি। হালকা প্রকৌশল পণ্যবর্ষে শুল্ক কাঠামো বৈষম্যসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের সব সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

উৎসঃদৈনিক যুগান্তর

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.