আট ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজার; অথচ ধুঁকে ধুঁকে মরছে হালকা প্রকৌশল শিল্প। উদ্যোক্তারা বলছেন, আমদানি করা পণ্যের দৌরাত্ম্যে ক্রমাগত বাজার হারাচ্ছেন তারা। কাঁচামাল আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক, আর ব্যাংক ঋণের জটিলতাই সব সম্ভাবনাকে ডুবাচ্ছে বলে দাবি শিল্প সংশ্লিষ্টদের।। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে অবশ্যই এগিয়ে নিতে এ শিল্পকে।

গতি হারাচ্ছে দেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প। ছবি: সময় সংবাদ

গত ৩৫ বছর ধরে হালকা প্রকৌশল শিল্পে কাজ করছেন সাব্বির মিয়া। তৈরি করেন বিভিন্ন শিল্পের দরকারি নানা যন্ত্রপাতি। একসময় ভাল চাহিদা থাকলেও এখন আর নেই তেমন। দেশ যখন এগিয়ে চলছে, আর বাড়ছে মাথাপিছু আয়, সেই যাত্রাপথে কাজ হারিয়ে সংসারের আয় রোজগার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

সাব্বির মিয়া বলেন,

আগের মতো কাজ নেই। যা রোজগার হয়, তা নিয়ে ঠিকমতো শ্রমিকদের বেতনও উঠে না। ধস নেমেছে যেন এ শিল্পে।

একই অবস্থা গুরুমুখী বিদ্যায় পারদর্শী ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে এ খাতে যুক্ত হওয়া হাজারও প্রকৌশলীর। তারা বলছেন, শিল্পকে কোনো সুরক্ষা না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে কমদামি যন্ত্রাংশ। যা তাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অসম বাজার প্রতিযোগিতা ও ঝুঁকির মুখে।

কৃষি, পোশাক কিংবা চামড়া — সব শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখে মূলত হালকা প্রকৌশল শিল্প। সব শিল্পের সূতিকাগার হয়ে থাকা এ হালকা প্রকৌশলের রয়েছে ৮ ট্রিলিয়ন বা ৮ লাখ কোটি ডলারের বিশ্ববাজার। অথচ বহু বছর ধরে হাঁকডাক দিয়ে বহুমুখী পণ্য নিয়ে রফতানি বাজার ধরতে চাওয়া বাংলাদেশ এখনও আটকে আছে নামমাত্র রফতানি আয়ের পরিসংখ্যানে।

কেনো এমন বেহাল দশায় দেশের এ শিল্পখাতটি? যদিও রফতানি নীতি, শিল্প নীতি, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা — সবখানেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে এ শিল্পকে। কথা ও কাজের ফাঁক গলেই দিন দিন শিল্পটি তলিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ এ খাতের শীর্ষ সংগঠন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশের।

সংগঠনটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন,

সারা বিশ্বেই হালকা প্রকৌশল খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু দেশে এর তেমন মূল্যায়ন হয় না। নতুন কোনো বিনিয়োগ বা উদ্ভাবন হচ্ছে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাবতে হবে, কোথায় কীভাবে সুবিধা দিলে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে দেশ। অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন,

চাইলেই হালকা প্রকৌশল শিল্পের বাজারকে প্রসারিত করা যায়। তাই সরকারকে এ শিল্পের পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে নীতি সহায়তা দিতে হবে। এতে বাড়বে রফতানি আয়ের বাজারও।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, হালকা প্রকৌশলকে হালকা হিসেবে দেখলে কখনোই টেকসই হবে না ভারী শিল্পের অগ্রযাত্রা।

উৎসঃ সময় সংবাদ

Leave comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *.